সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সরঞ্জামগুলো পরীক্ষা করে মান নির্ধারণের জন্য দেশে দুটি ল্যাব রয়েছে।
এর মধ্যে একটি ল্যাব ঢাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) এবং অন্যটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্থাপন করা হয়েছে।
এ দুটি পরীক্ষাগার স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে দুটি পরীক্ষাগারের আন্তর্জাতিক অনুমোদন না থাকায় অসন্তুষ্ট স্থানীয় সোলার প্যানেল নির্মাতারা।
সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এসএমএমএবি) সভাপতি মনোয়ার মঈন বলেন, ‘এ দুটি ল্যাবের আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি না থাকায় সৌর প্যানেল স্থানীয় কোনো প্রকল্পে সরবরাহ বা রপ্তানির মতো ব্যবসার ক্ষেত্রে তাদের সনদ কাজে আসে না।’
তিনি বলেন, স্থানীয় সৌর পণ্য সরবরাহের জন্য ল্যাবরেটরিগুলোর সনদের প্রয়োজন হয় যার স্বীকৃতি দেয়া হয় বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রো টেকনিক্যাল কমিশন (আইইসি) থেকে।
মনোয়ার মঈন আরও জানান, সব ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক এবং সম্পর্কিত প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি এবং সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যায়নের জন্য আইইসি উপযুক্ত একটি সংস্থা।
তিনি বলেন, সোলার প্যানেল সরবরাহকারীদের বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে তাদের পণ্য সরবরাহ এবং রপ্তানি ব্যবসার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ বা প্রশংসাপত্রের প্রয়োজন হয়। আইইসির অনুমোদন পেলে স্থানীয় ল্যাবগুলো এ জাতীয় সনদ ইস্যু করতে পারে।
স্থানীয় সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারীদের পণ্যের মান নিয়ে সনদ দেয়ার জন্য স্থানীয় ল্যাব দুটি যেন আইইসির স্বীকৃতি পেতে পারে সে জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, আইইসির অনুমোদন পেতে চাইলে স্থানীয় ল্যাবগুলোকে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে কারণ আইইসি প্রতি বছর এগুলো নিরীক্ষা করে।
সৌর শিল্পের সাথে সম্পৃক্তদের মতে, নয়টি স্থানীয় সংস্থা রয়েছে যারা বর্তমানে বার্ষিক চাহিদার তুলনায় প্রায় ১০০ মেগাওয়াটের সমান সৌর প্যানেল উৎপাদন করার সক্ষমতা রাখে।
তারা বলেন, ‘সরকারি নীতিগত সহায়তার অভাবে আমরা মাত্র ২০ মেগাওয়াট সমপরিমাণ প্যানেল উৎপাদন করতে পারছি এবং ৮০ মেগাওয়াট চীন, ভারত ও অন্যান্য কিছু দেশ থেকে আমদানি করা প্যানেলগুলো দ্বারা পূরণ করা হয়।’
এসএমএমএবি সভাপতি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে স্থানীয় ল্যাবগুলো থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক মানের সনদ বা প্রশংসাপত্র পেতে পারি, যা আমাদের দেশীয় সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক রপ্তানি উভয়ই বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে। এছাড়া বিদেশি এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে পণ্যের মান নির্ধারণী সনদ পাওয়ার জন্যও আমাদের অর্থ ব্যয় করতে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নিজস্ব পরীক্ষাগার স্থাপনের মাধ্যমে আইইসি অনুমোদিত সনদ জারির উদ্যোগ নিতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, ২০২০ সালের মধ্যে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যার অর্থ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে কমপক্ষে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা উচিত।
তবে এখন পর্যন্ত নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসছে কেবল ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার বেশির ভাগই সোলার হোম সিস্টেম থেকে পাওয়া।
এ অবস্থায়, লক্ষ্য অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই এক সাথে কাজ করা উচিত বলে মনে করছেন এসএমএমএবির নেতারা।